লিখিত পরীক্ষার লড়াই
৩৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। হাতে আছে
মাত্র সপ্তাহ খানেক সময়। লিখিত পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা করবেন ২০ হাজার ৩৯১
জন। ১ হাজার ৮০৩টি শূন্য পদের বিপরীতে পরীক্ষাটি কতটা
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, তা সহজেই বোঝা যায়। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই,
প্রয়োজন শুধু সঠিক পরিকল্পনার। পরীক্ষা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করবেন না।
এখন সময় আপনার পড়া বিষয়গুলোই ঝালিয়ে নেওয়ার। সামাজিক
যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে কম সময় ব্যয় করুন। প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট
ঘণ্টা পড়ুন। অনেকে হয়তো চাকরি করেন, তাঁদের বলব, নিজের সুবিধামতো সময় বের
করে নিন।
বিসিএসে তিনটি পরীক্ষার মধ্যে শুধু লিখিত পরীক্ষার
সুনির্দিষ্ট সিলেবাস আছে। লিখিত পরীক্ষা গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা,
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, বাংলা ও
ইংরেজি বিষয়ে হয়। নতুন সিলেবাসে এবারই প্রথম পরীক্ষা। পরীক্ষার সময়ও বেড়েছে
বেশ কয়েকটি বিষয়ের। সুতরাং প্রস্তুতির শুরুতেই সেটি মাথায় রাখতে হবে।
সিলেবাসের কোন বিষয়ে আপনার দুর্বলতা আছে, তা শনাক্ত করে দ্রুত উত্তরণের
উপায় খুঁজতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে ধারণা কম থাকলে তাতে জোর দিতে হবে আজই।
কারণ, কোনো বিষয় একেবারেই না পড়ে গেলে পরীক্ষায় নিজের মতো করে লেখাটাও সহজ
হবে না।
ইংরেজি পরীক্ষায় কম্প্রিহেনসনের মূল বিষয়টি ভালোভাবে বোঝাটা
খুব জরুরি। সারমর্মে প্যাসেজের কোনো লাইন সরাসরি কপি করবেন না। একই শব্দ
পুনরাবৃত্তি না করে সমার্থক শব্দ ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। এই ক্ষেত্রে
ভোকাবুলারি ভালো হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাদ, উদ্ধৃতি, তথ্য-উপাত্তের
প্রয়োগ আপনার ইংরেজি রচনাকে সমৃদ্ধ করবে। অনুবাদের জন্য বিগত সালের
পরীক্ষায় আসা অনুবাদগুলো চর্চা করুন। ক্ষেত্রবিশেষে ভাবানুবাদ আক্ষরিক
অনুবাদের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। বানান ও গ্রামারের ব্যাপারে বিশেষভাবে
সচেতন থাকবেন।
বাংলা বিষয়ে একটু গুরুত্ব দিয়ে বলতে চাই, অন্য বিষয় থেকে
এই সিলেবাস অধিকতর বড়। বাংলায় আপনি যদি অন্তত বিভিন্ন দরখাস্ত, মানপত্র বা
চিঠি ইত্যাদি লেখার নিয়ম আয়ত্ত করতে পারেন, তাহলে যেকোনো ধরনের পত্র
পরীক্ষায় আসুক না কেন, আপনি তার উত্তর লিখতে পারবেন। বিভিন্ন সাহিত্যিক ও
তাঁদের সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা রাখাটা জরুরি। গ্রন্থ-সমালোচনার ক্ষেত্রে
বলতে চাই, আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিটিই লিখুন।
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক
বিষয়াবলির জন্য বই ও পত্রপত্রিকার পাশাপাশি নির্ভর করতে পারেন অন্তর্জালের
ওপর। কোনো বিষয় মাথায় এলেই গুগলে সার্চ করে জেনে নিন। পরীক্ষায় সুনির্দিষ্ট
তথ্যের ভিত্তিতে যিনি যত সুস্পষ্ট উত্তর লিখতে পারবেন, তিনি তত বেশি নম্বর
পাবেন। তথ্যসূত্র হিসেবে বিভিন্ন লেখকের রচনা, পত্রিকার কলাম ও সম্পাদকীয়,
বিভিন্ন সংস্থার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারা ও ব্যাখ্যা,
উইকিপিডিয়া, ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল ও আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো অনুসরণ করা
যেতে পারে।
গাণিতিক যুক্তি বিষয়ে যেহেতু পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব,
সেহেতু অনুশীলনের ওপর জোর দিন। মানসিক দক্ষতা পরীক্ষায় ভুল উত্তরে নম্বর
কাটা যাবে, তাই উত্তর দেওয়ার আগে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে নিন। সাধারণ বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বইগুলোর সঙ্গে আগের বছরের প্রশ্নগুলোতে চোখ
বুলিয়ে নিন।
লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নের গুরুত্ব ও নম্বরের ভিত্তিতে সময়
বণ্টন লেখা শুরু করার আগেই ঠিক করে নিন। প্রশ্নের উত্তর বড় হতেই হবে, এমন
কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। সময় বেঁধে পরীক্ষা দেওয়ার অনুশীলন আপনার ভয় ও জড়তা
কাটাতে সাহায্য করবে।
সামনে আর মাত্র দুটি ধাপ। মনোবল ধরে রেখে
পড়াশোনা করুন নিয়মিত। আর অবসরে ভালো লাগার বিষয় নিয়ে মগ্ন থাকুন।
আত্মবিশ্বাস, একাগ্রতা আর অনুশীলনের সঠিক মিশেলই হতে পারে আপনার সাফল্যের
সহায়।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment
Share your thoughts