ডাঃ নাজিরুম মুবিনঃ আমার খুব প্রিয় কিছু ছোট ভাই এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে।
এদের সবাই সেকেন্ড টাইমার। সবাই দুর্দান্ত
মেধাবী। সবারই ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভালো ভালো সাবজেক্টে এডমিশন নেয়া আছে।
কিন্তু তারা মেডিকেলে পড়তে চায়। মনে- প্রাণে চায়। তাই দ্বিতীয়বারের মতো
ভর্তিযুদ্ধে নামে তারা। একজনের হয়
ময়মনসিংহ মেডিকেলে। আরেকজনের সিলেট
মেডিকেলে।
আবার ৭০ পেয়েও দুই জনের চান্স হয় নি। হবেই
বা কিভাবে। প্রশ্ন ফাঁসের এই যুগে ৭০ কোন মার্কসই না। যদিও ৭ বছর আগে আমি ৬৭ পেয়ে
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে চান্স
পেয়েছিলাম। ৭০ পেলে আমার ডিএমসিতে হয়ে
যেত। আমার ছোট ভাইগুলো খুব হতাশ হয়ে
পড়েছে। প্রতি বছর মেডিকেল-বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে ভর্তিচ্ছু ছাত্র- ছাত্রীদের এরকম স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়া শুরু হয়।
অধিকাংশই তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে
পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারে না।
ঠিক ৭ বছর আগে এরকম সময়ে আমরা ছিলাম
মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার্থী। অনেকের মতো
আমার খুব কাছের এক বন্ধুর একমাত্র টার্গেটই ছিল মেডিকেল। প্রচুর পরিশ্রমও করেছিল সে।
কিন্তু চান্স পায় নি। একরাশ হতাশা নিয়ে
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা
দিতে থাকল। অবশেষে তার ঠিকানা হলো
সাস্টের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপার্টমেন্টে। আর আমি মাইগ্রেশন করে আসলাম সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে।
পরের বছর পরীক্ষা দিতে চেয়েছিল। আমি
বলেছিলাম, যেখানে আছো সেখানেই যদি ভালো
রেজাল্ট করতে পারো তাহলে অনেক কিছু করতে
পারবে। তবুও তার মন খারাপ। তখন তাকে
বলেছিলাম, তোমাকে নিয়ে হয়ত আল্লাহ্র আরো ভালো পরিকল্পনা আছে। সে মানে বুঝতে পারল
না। তাকে ভেঙ্গে বললাম। মানুষ যখন আল্লাহ্র
কাছে আন্তরিকভাবে কিছু চায়। আল্লাহ্ তখন
তিন ধরণের উত্তর দিয়ে থাকেন। প্রথম উত্তর,
ঠিক আছে তোমার চাওয়া পূর্ণ করা হবে।
দ্বিতীয় উত্তর, তোমার চাওয়া পূর্ণ করা হবে তবে এখন না পরে। শেষ উত্তরটি হলো, তোমাকে
নিয়ে আমার এর চেয়েও ভালো পরিকল্পনা আছে।
প্রথম দুই উত্তর সহজেই বুঝা যায়। কিন্তু তৃতীয়
উত্তরটা বুঝতে হলে অনেক সময় অপেক্ষা করতে
হয়। দৃশ্যমান কোন কিছু দিয়ে উদাহরণ না
দিলে, পার্থিব কোন কিছু দিয়ে তুলনা না করলে মানুষ কোন বিষয় বুঝতে পারে না। এটা
মানুষের সীমাবদ্ধতা। মানবীয় দূর্বলতা। তাই
তিন নম্বর উত্তরটা বুঝতে আমাদের দেরি হয়।
কষ্ট হয়। আমার বন্ধুও তখন বুঝে নি। সত্যি কথা
আমিও ভালো মতো বুঝি নি। বলার দরকার তাই
ভাবসাব নিয়ে বলেছিলাম আর কি। আমার সেই মেডিকেলে ভর্তি হতে চাওয়া বন্ধু
চার বছর বেশ ভালো রেজাল্টই করল।
ডিপার্টমেন্টের সেকেন্ড হলো। আর আমিও পাশ
করে ইন্টার্নি শুরু করলাম। একদিন আমি
ডিঊটিতে। হঠাৎ সেই বন্ধুর কল। “অই আমি
মনোবুশো স্কলারশিপ পাইছি।” মনোবুশো জাপানের ন্যাশনাল স্কলারশিপ। এই
স্কলারশিপের অধীনে সে ৫ বছরের প্রোগ্রামে
জাপান যাবে। এমএসসি করবে তারপর
পিএইচডি। থাকা, খাওয়া ফ্রি। কোন টিউশন
ফি লাগবে না। উল্টো হাত খরচের জন্য মাসে
মাসে দেড় লাখ ইয়েন পাবে। পিএইচডি করার সময় আন্ডারগ্রাড স্টুডেন্টদের পড়াতে হবে।
সেটার জন্য আলাদা বেতন পাবে। প্রতিবছর
জাপান-বাংলাদেশ-জাপান বিজনেস ক্লাস
এয়ার টিকেট পাবে। তার গবেষণার বিষয়
ক্যান্সার ডায়াগনোসিস এন্ড প্রোগনোসিসে
ন্যানো টেকনোলজি। এই বিষয় নিয়ে আরো অনেক জায়গায় গবেষণা চলছে। যারাই আগে সাফল্য
পাবে তারাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল
পুরষ্কার পাবে। সে যে ল্যাবে কাজ করবে সে
ল্যাবের সাথে বিশ্বের আরো ১২টি দেশের
বায়ো-টেক ল্যাবের জয়েন্ট ভেঞ্চার আছে।
বলা যায় না হয়ত বা আমার বন্ধুই হবে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল
পাওয়া প্রথম বিজ্ঞানী।
বন্ধুর স্কলারশিপ পাওয়া উপলক্ষে কয়েক দফায়
পার্টি হলো। আমি যে তাকে আল্লাহ্র তিনটা
উত্তরের কথা বলেছিলাম সেটা তার মনে ছিল।
“তোমাকে নিয়ে আমার এর চেয়েও ভালো পরিকল্পনা আছে।” আল্লাহ্র এই তিন নম্বর
উত্তরের মানে আমি এখন বুঝছি, বলল আমার
বন্ধু। শুধু আমার বন্ধু না আমিও বুঝলাম ভালো
ভাবে। আজ রাতে আমার বন্ধুর ফ্লাইট। একটু
আগে কল করেছিল। দোয়া করতে বলছে সবাইকে।
কোন সাবজেক্টেই খারাপ না। কোন ভার্সিটিই খারাপ না। রেজাল্ট ভালো করার চেষ্টা করতে
হবে। আর আল্লাহ্র কাছে চাইতে হবে। তবে
যারা প্রশ্নপত্র কিনে চান্স পেয়েছে। তারা
আসলে টাকা দিয়ে মেডিকেলের একটা সিট
কিনে নি বরং জাহান্নাম কিনেছে। চান্স
পাওয়ার পর থেকে তাদের এই পরিচয় দিয়ে তারা যা উপার্জন করবে সব হারাম বলে গণ্য
হবে। ছাত্রাবস্থায় টিউশনি করে যা আয় করবে
তাও হারাম ডাক্তার হয়ে রোগী দেখে যা
উপার্জন করবে সেটাও হারাম হবে। তাদের
কোন ইবাদতও কবুল হবে না। কারণ ইবাদত কবুল
হওয়ার পূর্বশর্ত হালাল রোজগার। যারা পছন্দের জায়গায় চান্স পাবা না তারা
হতাশ হয়ো না। আল্লাহ্ হয়তো তোমাদের জন্য
এরচেয়েও ভালো পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
আসলে জীবন হচ্ছে একটা ২০০ মিটারের দৌড়
প্রতিযোগিতা। কেউ প্রথম ১০০ মিটার জোরে
দৌড়ায়। কেউ শেষের ১০০ মিটার। ফিনিশিং লাইন সবাই টাচ করে। কেউ একটু আগে। কেউ
একটু পরে। সুতরাং দৌড়াতে থাকো।
No comments:
Post a Comment
Share your thoughts